জলি এলএলবি ৩ রিভিউ: অক্ষয় কুমারের সেরা কমেডি-ড্রামা কি এবার আদালতে জিতবে?
জলি এলএলবি ৩ রিভিউ: অক্ষয় কুমারের সেরা কমেডি-ড্রামা কি এবার আদালতে জিতবে?
মুক্তির তারিখ: ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
পরিচালক: সুভাষ কাপুর
কাস্ট: অক্ষয় কুমার, আরশাদ ওয়ারসি, হুমা কুরেশি, সৌরভ শুক্লা
জানর: কমেডি, ড্রামা, লিগাল
সময়কাল: ২ ঘণ্টা ২৮ মিনিট
পরিচিতি: 'জলি এলএলবি' সিরিজের তৃতীয় অধ্যায়
বলিউডের সফল লিগাল কমেডি-ড্রামা ফ্র্যাঞ্চাইজি 'জলি এলএলবি'-এর তৃতীয় অধ্যায় মুক্তি পেয়েছে। প্রথম সিনেমায় যেখানে আমরা অরশদ ওয়ারসিকে দেখেছিলাম জগদীশ্বর মিশ্র ওরফে 'জলি' হিসেবে, দ্বিতীয় অধ্যায়ে অক্ষয় কুমার এই চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এবার তৃতীয় পর্বে আবারও অক্ষয় কুমার ফিরে এসেছেন জলি হিসেবে, তবে এবার তাঁর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন আরশাদ ওয়ারসি - যা এই সিরিজকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে।
সুভাষ কাপুরের পরিচালনায় এই সিনেমাটি শুধু হাস্যরসাত্মক নয়, বরং ভারতীয় আইনি ব্যবস্থার জটিলতা, সামাজিক অসমতা এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে তুলে ধরেছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই সিনেমাটি কতটা সফল হয়েছে।
গল্প: দুই জলির মুখোমুখি সংঘর্ষ
'জলি এলএলবি ৩'-এর গল্প শুরু হয় জগদীশ্বর মিশ্র (অক্ষয় কুমার) একজন সফল উকিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। তিনি এখন লখনউয়ের একটি বড় ল ফার্মের অংশীদার এবং হাই-প্রোফাইল মামলা নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু তার জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে যখন তার পুরানো প্রতিদ্বন্দ্বী জলি (আরশাদ ওয়ারসি) ফিরে আসেন এবং একটি বড় কর্পোরেট কেলেঙ্কারি মামলায় তার বিপক্ষে দাঁড়ান।
এই মামলাটি একটি বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বিরুদ্ধে, যারা একটি ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লুকিয়ে রেখেছিল, যার ফলে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অক্ষয় কুমার কোম্পানির পক্ষে লড়ছেন, আর আরশাদ ওয়ারসি ভুক্তভোগীদের পক্ষে। এই মামলা শুধু দুই উকিলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নয়, বরং তাদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং আদর্শের পরীক্ষাও।
অভিনয়: দুই জলির অসাধারণ পারফরম্যান্স
অক্ষয় কুমার এবং আরশাদ ওয়ারসি উভয়েই তাদের নিজ নিজ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। অক্ষয় কুমার একজন সফল কিন্তু বিতর্কিত উকিল হিসেবে তার চরিত্রের জটিলতা দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার অভিনয়ে হাস্যরস এবং গাম্ভীর্যের সমন্বয় দেখা গেছে, বিশেষ করে যখন তার চরিত্র নৈতিক দ্বন্দ্বে পড়ে।
আরশাদ ওয়ারসি, যিনি এই সিরিজের প্রথম সিনেমায় জলি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, এবার একজন আদর্শবাদী এবং নীতিবান উকিল হিসেবে ফিরে এসেছেন। তার অভিনয় আবেগপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য। দুই জলির মধ্যে আদালতের দৃশ্যগুলি সিনেমার হাইলাইট।
হুমা কুরেশি, যিনি অক্ষয় কুমারের স্ত্রী পুষ্পা মিশ্রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তারও অভিনয় প্রশংসনীয়। সৌরভ শুক্লা বিচারক সুন্দরলাল ত্রিপাঠীর ভূমিকায় আবারও দর্শকদের হাসিয়েছেন।
কাস্টের পারফরম্যান্স রেটিং
- অক্ষয় কুমার (জগদীশ্বর 'জলি' মিশ্র): ৪.৫/৫
- আরশাদ ওয়ারসি (জলি): ৪.৭/৫
- হুমা কুরেশি (পুষ্পা মিশ্র): ৪/৫
- সৌরভ শুক্লা (বিচারক সুন্দরলাল ত্রিপাঠী): ৪.২/৫
ভালো দিকগুলি
- অক্ষয় কুমার এবং আরশাদ ওয়ারসির অসাধারণ অভিনয়
- সুভাষ কাপুরের দক্ষ পরিচালনা
- সামাজিক বার্তা সম্বলিত মজবুত স্ক্রিপ্ট
- আদালতের দৃশ্যগুলিতে উত্তেজনা এবং হাস্যরসের সমন্বয়
- সুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি এবং বাস্তবসম্মত সেট ডিজাইন
খারাপ দিকগুলি
- দ্বিতীয় অংশে গল্পের গতি কিছুটা ধীর
- কিছু কিছু কমেডি দৃশ্য অতিরিক্ত মনে হয়েছে
- সাইড ক্যারেক্টারগুলি যথেষ্ট ডেভেলপ করা হয়নি
- কিছু প্লট পয়েন্ট অবাস্তব মনে হয়েছে
পরিচালনা এবং প্রযোজনা
সুভাষ কাপুর, যিনি এই সিরিজের আগের দুটি সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন, এবারও তার দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তিনি একটি জটিল আইনি ড্রামাকে সাধারণ দর্শকদের জন্য বোধগম্য এবং মনোরঞ্জক করে তুলেছেন। আদালতের দৃশ্যগুলি বিশেষভাবে ভালো পরিচালিত হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা এবং হাস্যরস একসাথে বজায় রাখা হয়েছে।
সিনেমাটির প্রযোজনার মান উচ্চ। লখনউয়ের লোকেশন শুটিং, সেট ডিজাইন এবং কস্টিউম সবই বাস্তবসম্মত এবং যুগোপযোগী। সংলাপগুলি তীক্ষ্ণ এবং প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে আদালতের দৃশ্যগুলিতে।
সংগীত এবং পটভূমি সঙ্গীত
সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম চক্রবর্তী। গানগুলি মধ্যম মানের, তবে পটভূমি সঙ্গীত বেশ প্রভাবশালী। বিশেষ করে আদালতের দৃশ্যগুলিতে ব্যবহৃত সঙ্গীত উত্তেজনা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
সিনেমাটিতে মোট চারটি গান রয়েছে, যার মধ্যে "জলি গুড ফেলো" এবং "কাড়া লাগা" সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে।
চূড়ান্ত বিচার: আদালতের রায়
'জলি এলএলবি ৩' একটি সফল সিনেমা, যা এই সিরিজের ভক্তদের নিরাশ করবে না। অক্ষয় কুমার এবং আরশাদ ওয়ারসির অসাধারণ অভিনয়, সুভাষ কাপুরের দক্ষ পরিচালনা এবং সামাজিক বার্তা সম্বলিত মজবুত স্ক্রিপ্ট সিনেমাটিকে একটি মনোরঞ্জক এবং চিন্তা উদ্রেককারী অভিজ্ঞতা করে তুলেছে।
যদিও সিনেমাটির কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যেমন দ্বিতীয় অংশে গল্পের গতি কিছুটা ধীর এবং কিছু কিছু কমেডি দৃশ্য অতিরিক্ত মনে হয়েছে, তবুও সামগ্রিকভাবে এটি একটি ভালো সিনেমা। বিশেষ করে যারা আইনি ড্রামা এবং কমেডি পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট ওয়াচ।
স্পয়লার অ্যালার্ট!
সিনেমার শেষে দেখা যায় যে অক্ষয় কুমারের চরিত্র জগদীশ্বর মিশ্র তার নৈতিক দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে সত্যের পক্ষে দাঁড়ায়। তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে গোপন তথ্য প্রকাশ করেন এবং আরশাদ ওয়ারসির সাথে মিলে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দিতে সাহায্য করেন। এই মোড় সিনেমার একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে সত্য এবং ন্যায় সবসময় জয়ী হয়।
উপসংহার
'জলি এলএলবি ৩' একটি সফল সিনেমা যা এই সিরিজের ভক্তদের আশা পূরণ করেছে। অক্ষয় কুমার এবং আরশাদ ওয়ারসির অসাধারণ অভিনয়, সুভাষ কাপুরের দক্ষ পরিচালনা এবং সামাজিক বার্তা সম্বলিত মজবুত স্ক্রিপ্ট সিনেমাটিকে একটি মনোরঞ্জক এবং চিন্তা উদ্রেককারী অভিজ্ঞতা করে তুলেছে।
আমাদের রেটিং: ৪.১/৫