২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বাংলা সিনেমা 'বহুরূপী' (Bohurupi) বর্তমানে সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমাটি বক্স অফিসে যেমন সফল হয়েছে, তেমনি দর্শক ও সমালোচকদেরও মন জয় করেছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা 'বহুরূপী' সিনেমার গল্প, চরিত্র, পরিচালনা এবং এর পেছনের কারিগরদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সিনেমার গল্প: এক সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী

'বহুরূপী' সিনেমার মূল গল্প একজন সাধারণ জুট মিল শ্রমিক বিক্রমকে (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) নিয়ে, যিনি অন্যায়ভাবে একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েন।

প্রেক্ষাপট ও ঘটনার সূত্রপাত

সিনেমার গল্পটি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে তৈরি। বিক্রম একজন বাণিজ্য স্নাতক এবং স্থানীয় একটি পাটকলের কর্মচারী ছিলেন। তার জীবন শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু একটি রাজনৈতিক হত্যার মিথ্যা অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শুরু হয় তার জীবনে চরম দুর্ভোগ।

প্রতিশোধের আগুন

পুলিশের হেফাজতে বিক্রমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই ঘটনার পর, তার ভেতরের মানুষটি যেন সম্পূর্ণ বদলে যায়। সমাজের প্রতি তার ধারণা পাল্টে যায়, এবং সে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে ওঠে।

বহুরূপীর জন্ম

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, বিক্রম 'বহুরূপী' নামে পরিচিত একজন ব্যাংক ডাকাত হয়ে ওঠে। সে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যাংক ডাকাতি করতে শুরু করে। এই কাজে তাকে সাহায্য করে তার স্ত্রী ঝিমলি (কৌশানী মুখোপাধ্যায়)।

চোর-পুলিশের খেলা

অন্যদিকে, সৎ পুলিশ অফিসার সুমন্ত ঘোষাল (আবীর চট্টোপাধ্যায়) এই 'বহুরূপী'কে ধরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরপর শুরু হয় তাদের মধ্যে এক রুদ্ধশ্বাস বুদ্ধির খেলা, যা সিনেমাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

চরিত্র এবং অভিনয়

'বহুরূপী' সিনেমার প্রধান আকর্ষণ এর শক্তিশালী চরিত্র এবং তাদের অসাধারণ অভিনয়।

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই সিনেমায় বিক্রমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন সাধারণ মানুষ থেকে 'বহুরূপী' হয়ে ওঠার চরিত্রে তার রূপান্তর দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

অন্যান্য চরিত্রে অভিনয়

• আবীর চট্টোপাধ্যায়: সুমন্ত ঘোষালের চরিত্রে, যিনি একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
• কৌশানী মুখোপাধ্যায়: ঝিমলি, বিক্রমের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
• ঋতাভরী চক্রবর্তী: সুমনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

পরিচালনা ও চিত্রনাট্য

নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনা 'বহুরূপী'কে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।

আকর্ষণীয় চিত্রনাট্য

পরিচালকদ্বয় একটি বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন, যা দর্শকদের ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সিনেমার গতি কোথাও কমেনি, বরং শেষ পর্যন্ত দর্শকদের আগ্রহ বজায় রেখেছে।

মানবিক সম্পর্কের উপস্থাপন

থ্রিলারের পাশাপাশি, সিনেমাটিতে মানবিক সম্পর্ক এবং সামাজিক বিষয়গুলোও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

সংগীত

'বহুরূপী' সিনেমার গানগুলো সিনেমার গল্পের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হয়েছে।

সঙ্গীত পরিচালনা

• বনি চক্রবর্তী
• অনুপম রায়* অর্ণব দত্ত
• শিলজিৎ মজুমদার

জনপ্রিয় গান

সিনেমাটির 'ডাকাতিয়া বাঁশি' এবং 'তুই আমার হয়ে যা' গানগুলো এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

সামগ্রিক মূল্যায়ন

'বহুরূপী' একটি সফল সিনেমা, যা দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে।

সাফল্যের কারণ

সিনেমাটি সিস্টেমের ব্যর্থতা এবং একজন সাধারণ মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলে। শক্তিশালী অভিনয়, টানটান চিত্রনাট্য এবং অসাধারণ পরিচালনার কারণে এটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি 'বহুরূপী' সিনেমা সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।