Megh Bristi Ruddur | মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর | Full Natok | Apurba | Sadia Ayman | Masrikul |Bangla Natok

---

ভূমিকা

নাটকের গল্পটি মূলত রোমান্টিক-কমেডি ধাঁচের হলেও, পরিবার, সামাজিক চাপ, স্বপ্ন, হতাশা ও সম্পর্কের জটিলতার চিত্র তুলে ধরে। কেন্দ্রীয় চরিত্র দু'জন—রাহুল ও নীতু—তাদের প্রেম, বিয়ে এবং বিয়ের পর এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে গল্প এগিয়ে যায়।

---

চরিত্র পরিচিতি

• রাহুল: এক তরুণ, কর্মহীন, বাবা-মার সাথে থাকে। বাবার কঠোরতা অনেকটাই ‘হিটলার’ উপাধি এনে দিয়েছে পরিবারে।
• নীতু: মেধাবী, সাহসী ও আবেগপ্রবণ মেয়ে। তার পরিবার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো, বিশেষত এক আত্মীয়ের সাথে।
• রাহুলের বাবা (হিটলার): রাশভারি, নিয়ন্ত্রণপ্রিয়, ছেলের বেকারত্ব এবং গৃহস্থালীর বিষয়ে বেশ কড়া।
• রাহুলের মা: সহজ-সরল, সন্তানের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকেন।
• নীতুনের পরিবার: তাদেরও সামাজিক প্রথা-রীতিনীতি আছে; নীতুকে আত্মীয়-সংশ্লিষ্ট ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চায়।

---

শুরু (প্রেম এবং কাছাকাছি আসা)

গল্পের ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যায়, রাহুল ও নীতুর মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নীতু লক্ষ্য করে, রাহুল তাকে নিয়মিত গোপনে দেখে। একদিন সে রাহুলকে নিজের অনুভূতির কথা জানায়।
দু’জনেই স্বীকার করে—তারা একে অপরকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। রাহুলের কথাবার্তায় মজার ছাঁপ, সে নীতুকে কখনো ইলিশ মাছ, কখনো বেগুনের সাথে তুলনা করে—তাতে রোমান্টিক দৃশ্যও তৈরি হয়, আবার হালকা হাস্যরসও আসে।

প্রেমে পড়ার পর, তারা একসাথে রিকশায় ঢাকার নানা জায়গায় ঘোরে, ছোট ছোট আনন্দ ভাগাভাগি করে। এই সময়েই নীতু তার জন্মদিনের স্মৃতি ও ব্যথার কথা শেয়ার করে। তার বাবা-মা ছোটবেলায় এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন; এসব বলে আবেগধর্মী মুহূর্ত তৈরি হয়। রাহুল অঙ্গীকার করে, সে চিরকাল নীতুর পাশে থাকবে।

---

বিয়ের সিদ্ধান্ত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব

নীতুর পরিবার চায়, সে তাদের আত্মীয় এক ছেলের সাথে বিয়ে করুক, যে আমেরিকায় থাকে এবং বিশেষভাবে আজই দেশে ফিরছে। কিন্তু নীতু সিদ্ধান্ত নেয়, সে কাউকে নয়, কেবল রাহুলকেই বিয়ে করবে।
তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ দ্বিধা চলে; সমাজ ও পরিবারের ভয়ে রাহুল দ্বিধাগ্রস্ত। শেষ পর্যন্ত, নীতুর জেদের কাছে হার মানে—তারা সিদ্ধান্ত নেয়, কোর্ট ম্যারেজ করবে।

অল্প কয়েকজন বন্ধু নিয়ে, তারা বিয়ে করে। বিয়ের পর দু’জনে রিকশায় গোটা শহর ঘোরে, স্বপ্ন দেখে—কিন্তু তারা জানে, এই বিয়ের পর সামাজিক ঝড় আসবেই।

---

নতুন সমস্যা: শ্বশুর বাড়ির দরজায়

বিয়ের পর নীতু সাহস করে রাহুলের বাড়িতে যায়। বৃষ্টি ভেজা শরীর, বৃষ্টির মতোই অসহায় অবস্থায় সে দরজায় দাঁড়ায়। কিন্তু রাহুলের বাবা (হিটলার) কোনোভাবেই তাকে মেনে নিতে চায় না। রাহুল ভয়ে পালিয়ে যায়—নীতু একলা দাঁড়িয়ে, দরজায় কড়া নাড়ে।

শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলে, তাদের “রাহুল” নামে কোনো ছেলে নেই, তারা কিছুই জানে না। অপমান, অপ্রীতিকর ও অনিশ্চয়তায় ডুবে, নীতু কেঁদে ফিরে যায় এক বান্ধবীর বাসায়।

---

পরিবারের ভেতরের টানাপোড়েন

রাহুলের মা-বাবার মধ্যে কথোপকথনে বোঝা যায়, বাবা সন্তানকে নিয়ে খুব হতাশ; চাকরি না-পাওয়া, ঘরের কর্তৃত্ব—সবকিছুতেই তিনি কঠোর। মা একটু কোমল, সন্তানের সুস্থতা ও সুখ চান।

নীতু যখন ফিরে যায়, বান্ধবীর কাছে নিজের দুঃখ-কষ্ট খুলে বলে। একদিকে সে চায়, সমাজ-সংসার যাই হোক, তার ভালোবাসার মানুষর কাছে থাকতে, অন্যদিকে বাস্তবতার চাপে বিধ্বস্ত।

রাহুল বাড়ি ফিরতে পারে না, বন্ধুদের বাসায় রাত কাটায়। বাবা তার উপর আরও রেগে যান, বাড়ির বাইরে থাকার জন্য, বেকারত্বের জন্য। মায়ের চোখে সন্তানের কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। সন্ধে থেকে রাত, বৃষ্টি—এক গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়।

---

দ্বিধা, হতাশা ও হৃদয়ের টান

রাহুল ও নীতু ফোনে যোগাযোগ রাখে—দু’জনেই নিজেদের অসহায়তা, স্বপ্ন ও হতাশা ভাগাভাগি করে। রাহুল বলে, সে নিজেকে দিনের পর দিন ব্যর্থ মনে করে, চাকরি না থাকায় বাবার চোখে ছোট হয়ে গেছে।
নীতু বলে, তার স্বপ্ন ছিল স্বামীর সাথে বিয়ের রাতে রিকশায় শহর ঘুরবে, মাথা রাখবে কাঁধে, গরুর মাংস-পরোটা খাবে চাঁনখাঁর পুলে, তারপর সারাদিন ঘুমাবে—কিন্তু বাস্তবে সে একলা, স্বামী-সংসার ছাড়াই নিজের বিয়ের রাত কাটায়।

আবারও মনে হয়, পারিবারিক স্বীকৃতি না-পেলে সবকিছু ব্যর্থ। রাহুল নিজের পরিবার ও নীতুর জন্য কি করতে পারবে—এই দ্বন্দ্বে ভুগে।

---

অসামঞ্জস্য ও ভুল বোঝাবুঝি

পরদিন, নীতু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শ্বশুরবাড়ির কেউ অবশেষে তাকে উদ্ধার করে, না চেনা মেয়ে বলে প্রথমে কিছুটা দূরে রাখে; পরে মায়ার টানে সাহায্য করে। রাহুলের মা তাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেন—এতে রাহুলের বাবা ও মায়ের মধ্যে আরও ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে, মনে হয় বহুদিনের লুকানো সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে (যা আসলে সত্য নয়, কেবল পরিস্থিতিজনিত ভুল বোঝাবুঝি)।

বাড়িতে কলহ, অপমান, কান্না—সব একসাথে চলে। নীতু মাথা গুঁজার জন্য জায়গা পেলেও, স্বামীর সংসার, স্বপ্নের দাম্পত্য—এসব কিছুই তার নেই।

---

সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা

শ্বশুরের চোখে নীতু হঠাৎ ‘মেয়ে’ হয়ে যায়—সে-ও বুঝে, বাস্তবটা কতটা কঠিন। ভবিষ্যতের জন্য, চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে হয়।
রাহুলকেও বলে দেওয়া হয়—চাকরি না-পেলে বাড়ি ফেরা যাবে না; “ছেলে” হিসেবে নয়, “জামাই” হিসেবে বিবেচিত হবে।

নীতু হয়তো বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিল, কিন্তু এখানে বিয়ে মানে শুধুই সামাজিক টানাপোড়েন, স্বপ্নভঙ্গ আর সময়ের প্রতীক্ষা।

---

বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার পরীক্ষা

গোটা গল্পজুড়ে রাহুল ও নীতুর সম্পর্কের নানা দিক ফুটে ওঠে। কঠোর বাস্তবতার মাঝেও দু‘জন একে অপরকে সাহস দেয়।
রাহুলের মা নীতুকে নিজের স্বর্ণালঙ্কার ও বিয়ের শাড়ি দেন, যাতে তার বিয়েটা কিছুটা হলেও “নিজের” মনে হয়। স্বামী-সংসার ছাড়া বিয়ের রাতে বিয়ের সাজ—এ যেন এক অদ্ভুত ট্র্যাজেডি।

তাদের ফোনালাপে হতাশা, স্বপ্নভঙ্গ, সামাজিক অপমান, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—সব মিশে আছে।
নিজেদের তৈরি করা ছোট ছোট স্বপ্নের কথা মনে করে, দু‘জন আবারও নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে—তাদের প্রেমটাই শেষ পর্যন্ত বড়। কে বোঝে, পরিবারের কঠোরতার আড়ালে কখনও হৃদয়ের দরজা খুলে যেতে পারে!

---

সমাপ্তি এবং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

নাটকের শেষে, রাহুলের বাবা কিছুটা নরম হন—সন্তানকে একেবারে ছাড়তে পারেন না।
নীতুও বুঝে যায়, কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও সম্পর্কের অর্থ, মূল্যবোধ ও ভালবাসা বারবার পরীক্ষিত হয়।
তাদের বিয়ের রাত আর পাঁচটা স্বাভাবিক বিয়ের মতো নয়—কিন্তু হৃদয়ের সংযোগেই তারা আবারও শক্তি খুঁজে নেয়।

নাটক শেষ হয় সহানুভূতি, ও ভালোবাসার বার্তা দিয়ে—কঠিনতায় প্রেম অটুট থাকলে, অবশেষে সাফল্য আসেই।

---

মূল বার্তা

“মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুর”—তিনটি আবহ যেমন জীবনে বদল আনে, তেমনি প্রেম-পরিবার-সমাজও জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে রকমফের আনে। স্বপ্নভঙ্গ, হতাশা, ভালোবাসা, সাহস—সবকিছু মিলেই জীবনের পরিপূর্ণতা।”

---