"মার" (Maar) নামের একটি তামিল ক্রাইম থ্রিলার সিনেমার গল্প এটি, যা ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে।

গল্পের শুরু হয় চেন্নাই শহরে, যেখানে একজন সিরিয়াল কিলার রাতের আঁধারে মেয়েদের গলায় ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করছে এবং তাদের শরীর কালো হয়ে যাচ্ছে। পরের দিন সকালে আবর্জনার স্তূপে তাদের বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই রহস্যময় খুনের তদন্তভার পান সিনিয়র পুলিশ অফিসার ধ্রুব। এই কেসটি তার কাছে শুধু একটি দায়িত্ব নয়, এর সাথে তার একটি ভয়ঙ্কর পুরনো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নয় বছর আগে তার নিজের মেয়ে প্রিয়াও একই কায়দায় খুন হয়েছিল এবং তার শরীরও কালো হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর ধ্রুব পুলিশ থেকে দূরে ছিলেন।

প্রথম শিকার রামাইয়া নামের এক মেয়ে, যাকে তার প্রেমিক কার্তিক ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মুখোশধারী এক ব্যক্তি আক্রমণ করে এবং ইনজেকশন দেয়। রামাইয়ার শরীর কালো হয়ে যায় এবং সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরের দিন সকালে তার মৃতদেহ আবর্জনার স্তূপে পাওয়া যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। রামাইয়ার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় যে খুনি নিজেই তার মৃত্যুর পর "My Worst Birthday Ever" ক্যাপশন দিয়ে তার ছবি পোস্ট করেছে।

তদন্তের সময় ধ্রুব জানতে পারেন যে রামাইয়ার গলায় একটি লকেট ছিল, যা কার্তিক তাকে উপহার দিয়েছিল, কিন্তু মৃতদেহে সেই লকেটটি পাওয়া যায়নি। কালো গাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায় যে গাড়ির লাইসেন্স প্লেট নকল এবং গাড়িটি কাস্টমাইজ করা। এরপর ধ্রুব একটি কালো অ্যাম্বাসেডর গাড়ি দেখতে পান যার ধুলোয় রামাইয়ার লকেটের ডলার সাইনের মতো একটি চিহ্ন আঁকা ছিল। ফরেনসিক পরীক্ষার পর গাড়ির আঙুলের ছাপ ২১ বছর বয়সী অরিভু নামের এক ছেলের সাথে মিলে যায়, যাকে এর আগে মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

অরিভুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। অরিভু জানায় যে সে রামাইয়াকে (তার প্রেমিকা) চিনত, কিন্তু সে সেই রামাইয়া নয় যাকে হত্যা করা হয়েছে। সে তার অতীতের খারাপ স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য একটি বিশেষ ওষুধ খায়, যা সে গুগল করে খুঁজে পেয়েছিল। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান যে অরিভুর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর, সে তার জীবনের প্রতিটি ঘটনা বিস্তারিতভাবে মনে রাখতে পারে। অরিভু জানায় যে তার প্রেমিকা রামাইয়ার কারণে সে এই ওষুধ খাওয়া শুরু করে। এই রামাইয়া ছিল তার কলেজের সহপাঠী, যে তাকে ভালোবাসত। অরিভু সাঁতার চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিল, আর রামাইয়া আমেরিকায় থিতু হতে চেয়েছিল। রামাইয়া একসময় একটি কোম্পানিতে চাকরি নেয় এবং সেখানকার এইচআর তাকে আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ দেয়, কিন্তু শর্ত ছিল যে তাকে বিয়ে করতে হবে। অরিভু এতে রাজি না হওয়ায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর অরিভু মাদক পাচার মামলায় জড়িয়ে পড়ে।

অরিভু জানায় যে তার এই অসাধারণ স্মৃতিশক্তির কারণে সে যখন জলে থাকে, তখন সে অতীতের ঘটনাগুলি মানসিকভাবে আবার দেখতে পায়। ধ্রুব অরিভুকে একটি সুইমিং পুলে নিয়ে যান। জলে নেমে অরিভু সেই রাতের ঘটনা মানসিকভাবে পুনরায় দেখতে পায়। সে দেখে যে একজন চশমা পরা লোক রামাইয়ার লকেটটি তুলে নিচ্ছে। এর ফলে ধ্রুব নিশ্চিত হন যে অরিভু নির্দোষ এবং খুনি অন্য কেউ।

অরিভুর মাধ্যমে ধ্রুব জানতে পারেন যে খুনি একটি প্যাঁচা পোষে এবং একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে প্রবেশ করে, যার গেটে একটি ক্রসের চিহ্ন আছে। ধ্রুব সেই বাড়ি খুঁজে বের করেন, কিন্তু সেখানে খুনিকে পাওয়া যায় না। তবে বাড়ির ভেতরে কিছু পোড়া কাগজ এবং একটি ড্রাগের কেস পাওয়া যায়, যেখানে লেখা ছিল "This is Dark Truth"।

এদিকে, অরিভুর বোন অখিলা নিখোঁজ হয়ে যায়। অরিভু সন্দেহ করে যে একটি কালো গাড়িতে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর একটি মৃতদেহ আবর্জনার স্তূপে পাওয়া যায়, যা রামাইয়ার মৃতদেহের মতোই কালো ছিল এবং অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। তবে, অরিভু মৃতদেহটি দেখে জানায় যে এটি অখিলা নয়, কারণ অখিলা হিল পরত না। পরে জানা যায়, এটি ডা. শালিনী নামের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের মৃতদেহ।

অরিভু আবারও সুইমিং পুলে গিয়ে খুনিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। সে দেখতে পায় খুনি একটি অন্ধকার ঘরে ঢোকে যেখানে দেয়ালে কিছু লেখা আছে। খুনি একটি ডায়েরি খোলে যেখানে রামাইয়ার ছবি আছে এবং "Rest in Peace Ramaya" লেখা। এরপর খুনি একটি ম্যাগাজিন দেখে, যার কভার পেজে একজন মেয়ের ছবি ছিল। খুনি সেই কভার পেজটি ছিঁড়ে ফেলে এবং নিজের মাস্ক খোলে, কিন্তু অরিভু অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তার মুখ দেখতে পায় না।

অরিভুর মাধ্যমে ধ্রুব জানতে পারেন যে সেই ম্যাগাজিনের কভার পেজে ভ্যানিলা নামের এক মডেলের ছবি ছিল। কার্তিকের স্টুডিওতে ধ্রুব এই ম্যাগাজিনটি দেখেছিলেন। ভ্যানিলা মূলত পিবি সিন্ধুর বায়োপিকে কাজ করার জন্য নিজের গায়ের রঙ কালো করেছিলেন। কার্তিকই তাকে মডেলিংয়ে নিয়ে আসে। কার্তিক আগে রামাইয়াকে ভালোবাসত এবং ভ্যানিলা তাকে দেওয়া লকেটটি কার্তিককে উপহার দিয়েছিল, যা পরে কার্তিক রামাইয়াকে দিয়েছিল।

তদন্তে জানা যায়, ভ্যানিলা মূলত সাদিকে-এর গ্যাংয়ের সদস্য মেঘা। সাধিক ছিল সেই ছেলে যে প্রিয়াকে র‍্যাগিং করেছিল। মেঘা সাদিকে-এর দ্বারা তার গায়ের রঙ নিয়ে উপহাসিত হয়েছিল। প্রতিশোধ নিতে মেঘা কলেজের কেমিস্ট্রি ল্যাবে একটি বিশেষ ইনজেকশন তৈরি করে, যা দিয়ে সে প্রথমে সাদিকে এবং পরে প্রিয়াকে হত্যা করে। এই ইনজেকশনটিই শরীরকে কালো করে দিত। পরবর্তীতে মেঘা নিজেকে ভ্যানিলা নামে পরিচয় দেয় এবং কার্তিকের মাধ্যমে রাজেশের সিনেমায় সুযোগ পায়। কিন্তু যখন কার্তিক রামাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করে এবং তাকে মেঘার দেওয়া লকেট উপহার দেয়, তখন মেঘা প্রতিশোধ নিতে রামাইয়াকেও একই কায়দায় হত্যা করে। এরপর ডা. শালিনীকেও হত্যা করে, কারণ শালিনী ম্যাগাজিনে মেঘার ছবি প্রকাশ করেছিলেন, যা তার জীবন নষ্ট করে দেয়।

শেষ পর্যন্ত, ধ্রুব মেঘাকে খুঁজে বের করেন এবং নিকিতাকে হত্যা করার ঠিক আগে তাকে গুলি করে হত্যা করেন। মেঘা মারা যাওয়ার আগে বলে, "যখন সমস্ত স্থান অন্ধকার, তখন শুধুমাত্র তারাগুলো কেন ঝলমল করে?" এর দ্বারা বোঝা যায়, মেঘার খুনের উদ্দেশ্য ছিল সমাজে গায়ের রঙ নিয়ে যে বৈষম্য, তার প্রতিশোধ নেওয়া। সে তাদের হত্যা করেছে যারা তাকে কালো হওয়ার কারণে অবহেলা করেছিল বা তার স্বপ্ন পূরণে বাধা দিয়েছিল।