বাংলাদেশের গ্রামে ১০ বছরের শিশুর অসাধারণ গণিত প্রতিভা

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এক অসাধারণ গণিত প্রতিভা। মাত্র ১০ বছর বয়সী রাকিব নামের এই শিশু মাথায় জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে সেকেন্ডের মধ্যে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্যালকুলেটর ছাড়া প্রায় অসম্ভব। রাকিবের এই অসাধারণ প্রতিভা এখন সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

অসাধারণ প্রতিভার আবিষ্কার

রাকিবের প্রতিভা প্রথম আবিষ্কার করেন তার স্কুলের শিক্ষক আবদুল করিম। তিনি লক্ষ্য করেন যে, রাকিব ক্লাসে দেওয়া যেকোনো গণিতের সমস্যা অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক দ্রুত সমাধান করতে পারে। একদিন তিনি পরীক্ষা করার জন্য রাকিবকে একটি জটিল গুণের সমস্যা দেন - ৭৮৯ × ৬৫৪। আশ্চর্যজনকভাবে, রাকিব মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সঠিক উত্তর (৫১৬,০০৬) বলে দেয়।

করিম স্যার বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানান, এবং তারা রাকিবকে আরও জটিল সমস্যা দিয়ে পরীক্ষা করেন। তিন এবং চার অঙ্কের সংখ্যার গুণ, ভাগ, বর্গমূল, ঘনমূল - সবই রাকিব অবিশ্বাস্য গতিতে সমাধান করতে পারে। এমনকি ক্যালেন্ডার গণনাতেও সে পারদর্শী - যেকোনো তারিখের সপ্তাহের দিন সে সঠিকভাবে বলতে পারে।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান

রাকিব একটি অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা আবদুল মালেক একজন দিনমজুর, আর মা রেহানা বেগম গৃহিণী। তাদের একটি ছোট্ট মাটির ঘর আছে গ্রামের প্রান্তে। রাকিবের আরও দুই ভাই-বোন আছে, কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। রাকিবের বাবা-মা কোনোদিন স্কুলে যাননি, তাই তারা তাদের ছেলের এই অসাধারণ প্রতিভা সম্পর্কে প্রথমে বুঝতেই পারেননি।

"আমরা জানতাম রাকিব পড়াশোনায় ভালো, কিন্তু এতটা প্রতিভাবান যে সে, তা আমরা বুঝতে পারিনি," রাকিবের বাবা আবদুল মালেক বলেন। "আমাদের সামর্থ্য নেই তাকে ভালো স্কুলে পড়ানোর, কিন্তু সে নিজেই নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে।"

প্রতিভার উৎস

আশ্চর্যের বিষয় হলো, রাকিব কখনও কোনো বিশেষ গণিত প্রশিক্ষণ পায়নি। তার কাছে কোনো গণিতের বই-ও ছিল না স্কুলের পাঠ্যবই ছাড়া। তাহলে কীভাবে সে এই অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করল?

রাকিব জানায়, সে ছোটবেলা থেকেই সংখ্যা নিয়ে খেলতে পছন্দ করত। "আমি মনে মনে সংখ্যাগুলো দেখতে পাই, যেন তারা আমার সামনে ভাসছে," সে বলে। "যখন দুটি সংখ্যা গুণ করি, আমি মনে মনে তাদের একসাথে সাজাতে পারি এবং উত্তরটি দেখতে পাই।"

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাকিব সম্ভবত একজন 'গণিত প্রতিভা' বা 'ম্যাথেমেটিকাল সাভান্ট'। এরকম প্রতিভা খুব বিরল, বিশ্বব্যাপী প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের এরকম প্রতিভা থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল

রাকিবের গল্প প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে যখন তার শিক্ষক একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে রাকিব জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করছে। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়, লাখ লাখ ভিউ এবং শেয়ার পায়। অনেক মানুষ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি যে একটি ছোট্ট গ্রামের শিশু এতটা দক্ষ হতে পারে।

এরপর স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো রাকিবের সাক্ষাৎকার নেয়, এবং তার গল্প জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় #রাকিবদ্যাম্যাথজিনিয়াস হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে থাকে, এবং হাজার হাজার মানুষ তার জন্য শুভকামনা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

সাহায্যের হাত

রাকিবের গল্প ভাইরাল হওয়ার পর, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। একটি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাকে পূর্ণ বৃত্তি প্রদান করে, যাতে সে উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। একটি প্রযুক্তি কোম্পানি তাকে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়, যাতে সে অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করে নিজের জ্ঞান আরও বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশ গণিত সমিতি রাকিবকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, এবং তাকে আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে। এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকেও তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

রাকিবের স্বপ্ন

এতসব পরিবর্তনের মধ্যেও রাকিব তার স্বভাবসুলভ সরলতা হারায়নি। সে এখনও সেই ছোট্ট গ্রামের সাধারণ শিশু, যে তার বন্ধুদের সাথে খেলতে পছন্দ করে। তবে তার স্বপ্ন এখন অনেক বড়।

"আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চাই," রাকিব বলে। "আমি এমন কিছু আবিষ্কার করতে চাই, যা মানুষের উপকারে আসবে। আমি চাই আমার মতো অনেক শিশু যেন তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পায়।"

রাকিবের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রতিভা যেকোনো জায়গায় জন্ম নিতে পারে - একটি বড় শহরের আড়ম্বরপূর্ণ বাড়িতে বা একটি প্রত্যন্ত গ্রামের মাটির ঘরে। প্রয়োজন শুধু সেই প্রতিভাকে চিনতে পারা এবং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া। রাকিবের মতো আরও কত প্রতিভা আমাদের চারপাশে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে, কে জানে!